আবুতাহের মণ্ডল জানতে চেয়েছেন ধান গাছে Astha Rhizo (Rhizobium) Use করা যাবে?
দারুণ প্রশ্ন করেছেন! এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়শই ভুল বোঝা একটি বিষয়।
সংক্ষেপে উত্তর হলো: ধান গাছে সরাসরি Astha Rhizo (Rhizobium) ব্যবহার করা উচিত নয়, তবে আপনি ধান ক্ষেতের জন্য Astha Azo (Azotobacter) বা BGF (Blue Green Algae/Azolla) ব্যবহার করতে পারেন।
কেন ব্যবহার করা যাবে না এবং সঠিক বিকল্প কী, নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
Astha Rhizo (Rhizobium) কেন ব্যবহার করা যাবে না?
রাইজোবিয়াম (Rhizobium) হলো এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে মাটিতে আবদ্ধ করে উদ্ভিদকে সরবরাহ করে। কিন্তু এর একটি বিশেষ শর্ত আছে:
নির্দিষ্ট গাছের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া: রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়াগুলি শুধুমাত্র ডাল জাতীয় বা লেগিউম (Legume) গোত্রের গাছের সঙ্গেই এক ধরনের সহাবস্থানমূলক সম্পর্ক (Symbiotic Relationship) তৈরি করতে পারে। এই সম্পর্ক তৈরি হয় গাছের মূলে নডিউল বা গুটি তৈরি করার মাধ্যমে।
ধান হলো নন-লেগিউম: ধান (Paddy) গাছ ডাল জাতীয় গোত্রের অন্তর্ভুক্ত নয় (এটি হলো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ বা Graminaceous Plant)। তাই, আপনি ধান গাছে রাইজোবিয়াম ব্যবহার করলেও, ব্যাকটেরিয়া ধানের মূলে কোনো নডিউল তৈরি করতে পারবে না বা নাইট্রোজেন আবদ্ধ করার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারবে না। ফলে তা কোনো কাজে আসবে না।
✅ ধান চাষের জন্য সঠিক বিকল্প কী?
ধান গাছের ক্ষেত্রে, নাইট্রোজেন আবদ্ধ করার জন্য এমন ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা উচিত, যারা মাটির মধ্যে মুক্তভাবে (Free-living) বা গাছের শিকড়ের বাইরে থেকেও কাজ করতে পারে।
ধানের জন্য আপনি নিম্নলিখিত দুটি বায়ো-ফার্টিলাইজার (Bio-Fertilizer) বা জৈব সার ব্যবহার করতে পারেন:
| বিকল্পের নাম | মূল উপাদান | কাজ করার পদ্ধতি | কার্যকারিতা |
| Astha Azoto | অ্যাজোটোব্যাকটার (Azotobacter) | এটি মাটির মধ্যে মুক্তভাবে বসবাস করে বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে। | ধানের শিকড়ের কাছাকাছি কাজ করে গাছের বৃদ্ধি ও নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়ায়। |
| BGF | নীল-সবুজ শৈবাল বা অ্যাজোলা | এটি জলজ পরিবেশে (বিশেষত ধান ক্ষেতের মতো ভেজা জমিতে) নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে এবং জৈব পদার্থ যোগ করে। | ভেজা বা জল জমে থাকা ধান ক্ষেতের জন্য এটি খুবই উপযোগী। |
🔬 ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
আপনি যদি ধানের জমিতে Astha Azoto বা BGF ব্যবহার করতে চান, তবে সাধারণত নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়:
বীজ শোধন (Seed Treatment): বীজ বোনার আগে বা চারা তোলার আগে অ্যাজোটোব্যাকটার দ্রবণ দিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে।
চারা ডুবিয়ে রোপণ: ধানের চারা জমিতে রোপণ করার আগে অ্যাজোটোব্যাকটারের মিশ্রণে ২-৩ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখা হয়।
মাটিতে প্রয়োগ: চারা রোপণের পরে অথবা বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাজোটোব্যাকটার বা BGF-কে গোবর সার বা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ধান ক্ষেতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সঠিক জৈব সার নির্বাচন করে আপনি রাসায়নিক নাইট্রোজেন সারের (যেমন ইউরিয়া) নির্ভরতা অনেকটাই কমাতে পারেন এবং একই সাথে মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন।

